প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য (পাঠ ৫)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আখলাক | NCTB BOOK
444
Summary

প্রতিবেশী সম্পর্কের গুরুত্ব

মানুষ সামাজিক জীব এবং প্রতিবেশী সম্পর্ক স্থাপন করা আমাদের কর্তব্য। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, প্রতিবেশী আবশ্যকভাবে সুরক্ষিত থাকতে হবে। সুতরাং, আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং সুন্দর আচরণ করা উচিত।

  • প্রতিবেশীকে বিপদে সাহায্য করা এবং অসুখে খবর রাখা জরুরি।
  • অবশেষে, প্রতিবেশীদের দোষ বের না করে, তাদের মঙ্গল কামনা করা মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব।
  • প্রতিবেশীদের উচিত উপহার দেওয়াসহ একে অপরের অধিকার রক্ষা করা।
  • প্রতিবেশীর হক অনুযায়ী, তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের অভাবে সাহায্য করা এবং সুখে-দুঃখে সমর্থন প্রদান করা দরকার।

শিক্ষার্থীরা প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সুফল সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লিখে শিক্ষককে দেখাবে।

মানুষ সামাজিক জীব। আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করি। আমাদের আশপাশে আরও অনেক লোক বসবাস করে। আমাদের চারপাশে আরও যারা বসবাস করে তারা সকলেই আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, 'সামনে পিছনে ডানে বামে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশী।'

স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে পাশাপাশি অবস্থানকারী কিংবা সাময়িকভাবে আশপাশে অবস্থানকারীকে প্রতিবেশী বলা হয়। এমনকি চলার পথের সহযাত্রীদেরও প্রতিবেশী বলা যায়।

কর্তব্য
আমরা মুসলমান। আমাদের চারপাশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যারা বসবাস করে তারা সবাই আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ করা আমাদের কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.)-এর বাণী:

خَيْرُ الْخَيْرَانِ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ

অর্থ: 'আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বাপেক্ষা উত্তম, যে তার প্রতিবেশীর নিকট উত্তম।' (তিরমিযি)

প্রতিবেশীকে বিপদে-আপদে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। মহানবি (স.) এ সম্পর্কে আরও বলেন, 'সেই ব্যক্তি আমার উপর প্রকৃত ইমান আনেনি যে আরামে রাত কাটায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত।' (দারিমি)

অসুখে-বিসুখে প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবেশীর দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করা উচিত নয়, তাদের মঙ্গল কামনা করা, কোনো প্রকার কষ্ট না দেওয়া এবং অন্যায়-অত্যাচার না করা আমাদের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। এ বিষয়ে রাসুল (স.) বলেন-

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَّا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ

অর্থ: 'সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার ও অন্যায় আচরণ থেকে নিরাপদ নয়।' (মুসলিম)

প্রতিবেশীদের একজনের হক অন্যজনের কাছে আমানতস্বরূপ। এ আমানতকে অবশ্যই হেফাজত করতে হবে। প্রতিবেশী যে কেউ কিংবা যেমনই হোক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি নির্বিশেষে সকলকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।
প্রতিবেশীকে প্রথমে সালাম দেওয়া এবং খানা-পিনায় শরিক করা প্রতিবেশীর কর্তব্যের শামিল। তাদের মাঝে উপহার উপঢৌকন বিনিময় করাও প্রতিবেশীর কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেশীকে কোনোরূপ ঘৃণা করা যাবে না এবং হীন ও নগণ্য মনে করা যাবে না। প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেন,
'প্রতিবেশীর হক হলো, সে যদি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে তুমি তার সেবা করবে। সে মরে গেলে তার লাশের সঙ্গে কবরস্থান পর্যন্ত যাবে, কাফন দাফনে অংশগ্রহণ করবে। সে যদি অর্থ অভাবে পড়ে, তাহলে তুমি তাকে ঋণ দেবে, সে যদি পরনের জন্য কাপড় সংগ্রহ করতে না পারে, তাহলে তুমি তাকে কাপড় সংগ্রহ করে দেবে। আর যদি কোনো কল্যাণ হয় তুমি তাকে মুবারকবাদ জানাবে। সে যদি কোনো বিপদে পতিত হয় তবে তুমি তার দুঃখের ভাগ নেবে, সহানুভূতি জানাবে। তোমার ঘর তার ঘর থেকে উঁচু বানিয়ে তাকে মুক্ত বায়ু থেকে বঞ্চিত করবে না। তোমার রান্নার পাত্রের বাতাস দিয়েও তাকে কষ্ট দেবে না। যদি তেমন অবস্থা হয়ই তাহলে তাকে এক চামচ খাবার পাঠিয়ে দেবে।' (তাবারানি)

প্রতিবেশী অভাবগ্রস্ত, দরিদ্র বা শ্রমজীবী হলেও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। তাদের পেশাকে সম্মান করতে হবে। সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে হবে, সম্মানের সাথে তাদের সম্বোধন করতে হবে।
আমরা প্রতিবেশীর সাথে মিলেমিশে থাকব। সুখে-দুঃখে বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়াব। তাদের সাথে ঝগড়া বিবাদ করব না।

কাজ : শিক্ষার্থীরা প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সুফল সম্পর্কে দলীয়ভাবে পাঁচটি করে বাক্য লিখে শিক্ষককে দেখাবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...